মঙ্গলবার ৪ মার্চ ২০২৫ - ১৭:৪৮
“নজর বা চোখ লাগা” বাস্তব নাকি কুসংস্কার?

“চোখ লাগা বা নজর লাগা” বিষয়টি যুক্তিবিরোধী নয়। চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন যে কিছু চোখে বিশেষ ধরনের চৌম্বকীয় শক্তি থাকে। ইসলামী হাদীসেও এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “নজর বা চোখ লাগা ভাগ্যকেও পরিবর্তন করতে পারে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী শিক্ষায় চোখ লাগাকে একটি প্রভাবশালী ঘটনা হিসেবে দেখা হয়, যা মানুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং দোয়া করার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে। 

নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তরে আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে চোখ লাগা এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। 

প্রশ্ন:
“চোখ লাগা বা নজর লাগা” কি বাস্তব? 

সংক্ষিপ্ত উত্তর:
“চোখ বা নজর লাগা” যুক্তিবিরোধী নয়। চিকিৎসকরা মনে করেন যে কিছু চোখে বিশেষ ধরনের চৌম্বকীয় শক্তি থাকে, যা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যায়। 

ইসলামী হাদীসেও এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেমন, আসমা বিনতে উমাইস (রা.) নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “জাফরের সন্তানদের চোখ লাগে, তাদের জন্য কি কোনো রুকইয়া (দোয়া সংবলিত তাবিজ) নেওয়া যাবে?” নবীজি (সা.) উত্তরে বলেছিলেন,
«نَعَمْ، فَلَوْ کانَ شَیْءٌ یَسْبِقُ الْقَدْرَ لَسَبَقَهُ الْعَیْنُ»
“হ্যাঁ, কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনো কিছু ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে, তবে তা হলো চোখ বা নজর লাগা।” [১]

নাহজুল বালাগায়ও বলা হয়েছে, “চোখ লাগা সত্য এবং এর থেকে বাঁচার জন্য দোয়া/ তাওয়াস্সুল করাও যায়েজ।”

বিস্তারিত উত্তর:
সূরা কালামের ৫১ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
«وَ إِنْ یَکادُ الَّذِینَ کَفَرُوا لَیُزْلِقُونَکَ بِأَبْصارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّکْرَ ...»
“যখন কাফিররা কুরআনের আয়াত শুনে, তখন তারা প্রায় তাদের চোখ দিয়ে তোমাকে আঘাত করে...” এই আয়াতের আলোকে প্রশ্ন উঠে, “চোখ বা নজর লাগা কি সত্য?”

অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন যে কিছু চোখে বিশেষ শক্তি থাকে, যা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি যুক্তিবিরোধী নয়, কারণ অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে কিছু চোখে চৌম্বকীয় শক্তি থাকে, যা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যায়। যেমন, হিপনোসিস বা মেসমেরিজম এই ধরনের শক্তির উদাহরণ। 

আজকের বিশ্বে “লেজার রশ্মি” নামক একটি অদৃশ্য রশ্মি রয়েছে, যা ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী। তাই কিছু চোখে বিশেষ শক্তি থাকা এবং তা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া অসম্ভব নয়। অনেকেই তাদের চোখের সামনে এমন লোক দেখেছেন যাদের চোখের শক্তি দ্বারা মানুষ, প্রাণী বা বস্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এ ধরনের বিষয়কে অস্বীকার করার প্রয়োজন নেই, বরং জ্ঞান ও যুক্তির আলোকে এর সম্ভাবনা স্বীকার করা উচিত। 

ইসলামী হাদীসেও এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেমন, আসমা বিনতে উমাইস (রা.) নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “জাফরের সন্তানদের চোখ লাগে, তাদের জন্য কি কোনো রুকইয়া (দোয়া সংবলিত তাবিজ) নেওয়া যাবে?" নবীজি (সা.) উত্তরে বলেছিলেন, “হ্যাঁ, কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনো কিছু ভাগ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে তা হলো চোখ বা নজর লাগা।” 

আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “নবী করিম (সা.) হাসান ও হুসাইন (আ.)-এর জন্য রুকইয়া করেছিলেন এবং এই দোয়া পড়েছিলেন,
«اُعِیذُکُمَا بِکَلَمَاتِ التَّامَّةِ وَ اَسْمَاءِ اللهِ الْحُسْنَی کُلِّهَا عَامَّةً مِنْ شَرِّ السَّامَّةِ وَ الْهَامَّةِ وَ مِنْ شَرِّ کُلِّ عَیْنٍ لَامَّةٍ وَ مِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدٍ»
‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণ বাণী এবং তাঁর সুন্দর নামসমূহের মাধ্যমে সকল প্রকার ক্ষতি, বিষাক্ত প্রাণী, প্রতিটি খারাপ চোখ এবং হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাইছি।’ এরপর নবীজি (সা.) আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এইভাবে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ইসমাইল ও ইসহাক (আ.)-এর জন্য দোয়া করেছিলেন’।’’  [২]

নাহজুল বালাগায়ও বলা হয়েছে,
«اَلْعَیْنُ حَقٌّ وَ الرَّقِیُّ حَقٌّ» [৩]
“চোখ বা নজর লাগা সত্য এবং এর থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করাও জায়েজ।” [৪, ৫]

তথ্যসূত্র:

১. মাজমাউল বায়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, তাবরাসি, ফজল ইবনে হাসান, নাসের খসরু প্রকাশনী, তেহরান, ১৩৭২ হিজরি, তৃতীয় সংস্করণ, খণ্ড- ১০, পৃষ্ঠা- ৫১২। 

২. আল-কাফি, শেখ কুলাইনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, মুহাক্কিক: গাফফারি, আলী আকবর, আখুন্দি, মুহাম্মাদ, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, তেহরান, ১৪০৭ হিজরি, চতুর্থ সংস্করণ, খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৫৬৯। 

৩. নাহজুল বালাগা, শরীফ রাদি, মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন, মুহাক্কিক: সুবহি সালেহ, হিজরত, কোম, ১৪১৪ হিজরি, প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা- ৫৪৬। 

৪. তাফসিরে নমুনা, মাকারেম শিরাজি, নাসের, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, তেহরান, ১৩৭৪ হিজরি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড- ২৪, পৃষ্ঠা- ৪২৬। 

৫. একশত আশি প্রশ্ন ও উত্তর, মাকারেম শিরাজি, নাসের, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়া, তেহরান, ১৩৮৬ হিজরি, চতুর্থ সংস্করণ, পৃষ্ঠা- ৫৯৪। 

সূত্র: আইনে রহমত - আয়াতুল্লাহিল উজমা মাকারেম শিরাজির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha